সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে প্রতিটি যুগের প্রতিটি অঞ্চলের সকল মহামনীষী আমাদের আকাবির। এ জন্যে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাতের পর সাহাবী, তাবেঈ, তাবে তাবেয়ীদের জীবনী ও ইতিহাস আমাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে মুতালাআ বরং হৃদয়াঙ্গম ও আত্মস্থ করা উচিত। এভাবে পর্যায়ক্রমে সকল যুগের আকাবির ও সালাফের সাথেও আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তোলা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এছাড়া প্রত্যেক অঞ্চলের মানুষদের জন্য সেই অঞ্চলের মনীষীদের সম্পর্কে জানাটাও অনেক জরুরি। মুসলমানদের ইতিহাস এবং আকাবির ও সালাফদের সম্পর্কে না জানাটা আমার কাছে মনে হয় এক বিরাট অপরাধ ও চরম অবহেলার নামান্তর ; কারণ এতে একজন মানুষ তার করণীয় ও ভবিষ্যত সম্পর্কে গাফেল ও উদাসীন থাকে।

পাক-ভারত উপমহাদেশে যাদের মাধ্যমে দ্বীনের প্রচার-প্রসার ঘটেছে সবাই আমাদের আদর্শ। যাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলেন উলামায়ে দেওবন্দ। বাস্তবিকভাবেই আকাবিরে দেওবন্দ ছিলেন উম্মাহর আদর্শ রাহবার ও পথপ্রদর্শক। তাকওয়া, পরহেজগারী, দুনিয়া বিমুখতা, শোকর, সবর, তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ, পরিচ্ছন্ন আখলাক, সুউচ্চ চিন্তাশক্তি, ইলমের গভীরতা, দ্বীনের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষা- সর্ব অঙ্গনেই তাঁরা ছিলেন অসাধারণ ও নজিরবিহীন। তাঁদের কোরবানি আর ত্যাগ-তিতিক্ষার সব উপাখ্যান বাস্তবিকভাবেই বিস্ময়কর। আমাদের সবচাইতে নিকটতম পূর্বসূরী হিসেবে তাঁদের সম্পর্কে যতটুকু জানা প্রয়োজন ছিলো ততটুকু আমরা তো জানি না বরং বলা যেতে পারে তাঁদের সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। তাঁদের শৈশবজীবন, ছাত্রজীবন, কর্মজীবন থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ই আমাদের কাছে ধোঁয়াশা ও অস্পষ্ট।

আকাবিরে দেওবন্দের জীবনী ও ইতিহাস বিশেষত তাদের তা'লীম ও তাআল্লুম বিষয়ে উর্দূভাষায় অসংখ্য রচনা ও সংকলন প্রণীত হলেও এ বিষয়ে বাংলাভাষায় রচিত গবেষণামূলক ও নির্ভরযোগ্য পুস্তক অপ্রতুলই বটে। এ বিষয়ের এক বিরাট শূন্যতা পূরণ করেছে "আকাবিরে দেওবন্দের ছাত্রজীবন"। অনবদ্য এ গ্রন্থের রচয়িতা প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, গবেষক ও লেখক, তালিবে ইলমদের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ এক দরদী মালী, উসতাযে মুহতারাম মাওলানা ইমদাদুল হক হাফি. ।

গ্রন্থটি হুজুরের দীর্ঘদিনের নিরলস সাধনা আর পরিশ্রমের ফসল। এটি সংকলনকালে কিতাব সংগ্রহ করতে হুজুর যে কতটা পরিশ্রম করেছেন, কতগুলো গ্রন্থের সহযোগিতা নিয়েছেন তা যারা দেখবে না হয়ত বিশ্বাস করতে পারবে না। কয়েকটি কিতাবের ক্ষেত্রে এমনও হয়েছে যে পূর্ণ কিতাবের আলাদা আলাদা পৃষ্ঠার ছবি পর্যন্ত তুলতে হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা হুজুরের এ খেদমতকে কবুল করুন। উম্মাহর যোগ্য রাহবার হিসেবে হুজুরের সুদীর্ঘ ও কর্মমুখর জীবন দান করুন।

এ পর্যন্ত গ্রন্থটির তিনটি খন্ড প্রকাশিত হয়েছে।

প্রথম তিন খন্ডে যাদের জীবনী আলোচনা করা হয়েছে তাঁরা হলেন:

#১ম খন্ডে-

১) হুজ্জাতুল ইসলাম আল্লামা কাসেম নানুতবী রহ.

২) ফক্বীহুন নফস আল্লামা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রহ.

৩) মাওলানা ইয়াহইয়া কান্ধলভী রহ.।

৪) শাইখুল হিন্দ মাহমূদ হাসান দেওবন্দী রহ.

৫) মাওলানা খলীল আহমদ সাহারানপুরী রহ.

৬) হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী রহ.

৭) মাওলানা যফর আহমাদ উসমানী রহ.

৮) মুফতী মুহাম্মদ শফী রহ.

৯) মুফতি ফয়জুল্লাহ রহ.

১০) আল্লামা ইউসুফ বানুরী রহ.

১১) সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.

১২) আল্লামা যাকারিয়া কান্দলবী রহ.

১৩) মুফতি মুহাম্মদ তাকী উসমানী দা. বা.

##২য় খন্ডে-

১৪) সাইয়েদ সুলাইমান নদভী রহ.

১৫) শাইখুল আদব আল্লামা এযায আলী রহ.

১৬) সাইয়েদ মানাযির আহসান গিলানী রহ.

১৭) মুফতি আজিজুল হক ইবনে মাওলানা নুর আহমদ রহ.

১৮) মুহাদ্দিসে কাবীর আল্লামা হাবিবুর রহমান আজমি রহ.

##৩য় খন্ডে-

১৯) মুহাক্কিকুল আসর আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ.

২০) মাওলানা ওয়াহিদুযযামান কিরানবী রহ.

সব খন্ড মিলে পৃষ্ঠাসংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে।

কেমন ছিলো তাঁদের মুতালাআ, মুজাকারা তাকরার, হিফজ, দরস-তাদরিসের পদ্ধতি; ইলমের জন্য তাঁরা কতটা আত্মত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন; তাঁদের মনোযোগিতা, আত্মনিমগ্নতা, সময়ের মূল্যায়ন, আখলাক, তাকওয়া, যুহদ প্রভৃতি কতটা উন্নত ছিলো; কোরআন হাদীস, ফিকহ, ইতিহাস, রিজাল, সাহিত্যসহ ইলমের সকল শাখায়, সর্ব অঙ্গনে তাদের যোগ্যতা ও পারদর্শিতা কতটা বিস্তৃত ছিল - সেই সকল বিষয়কে গ্রন্থকার আমানতদারিতার সাথে সংক্ষিপ্তভাবে ও সহজ সরল উপস্থাপনায় পেশ করেছেন। সকল ছাত্রের জন্য বইটি বারবার পাঠ করা আবশ্যক ; উসতাযদের জন্যেও এতে রয়েছে অসংখ্য দিকনির্দেশনা ও অফুরন্ত পাথেয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আকাবিরে দেওবন্দের যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে কবুল করুন।