আল্লামা নূরুল ইসলাম ওলীপুরী সাহেবের সংক্ষিপ্ত জীবনী
তথ্য সংগ্রহে ঃ মাওলানা আব্দুর রহীম।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন, মুনাযিরে আ’যম, আহলে সুন্নত ওয়াল জমা’তের ভাষ্যকার হযরত মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলীপুরী দা.বা. ‘মাওলানা ওলীপুরী’ নামেই সমধিক পরিচিত।
জন্ম ও বংশঃ
আমার সংগৃহিত তথ্য মতে, তিনি ১৯৫৫ খৃস্টাব্দে বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেটের অন্তর্গত হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলাধীন ওলীপুর নামক গ্রামে এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত ধার্মিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
হযরত শাহজালাল রহ.-এর সঙ্গী-সাথী ৩৬০ আউলিয়ার একজন শাহ সুলায়মান ফতেহ গাজী রহ.। শাহজি বাজার বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রেল স্টেশনের নিকট তাঁর মাযার আজও বিদ্যমান। অনেকের ধারণা যে, উক্ত ওলীর আস্তানা স্থলের পার্শ্ববর্তী গ্রাম হিসেবেই এ গ্রামের নাম রাখা হয় ওলীপুর।
তাঁর পিতা হযরত মাওলানা আব্দুর রহীম রহ. হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলাধীন গৌরাঙ্গের চক পরগণার স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব নঈম উল্লাহ তালুকদারের বংশধর। তিনি এক সময় ইসলামী জীবন যাপনের সুবিধার্থে ওলীপুর গ্রামে বসবাস শুরু করেন। মাওলানা আব্দুর রহীম রহ.-এর আদর্শ, ধার্মিকতা ও পরহেযগারির বিবরণ আজও অত্র অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে এক বিস্ময়কর কিংবদন্তি। তিনি ছিলেন একজন আদর্শবান, ধার্মিক ও প্রসিদ্ধ ওয়ায়েজ। কিন্তু মাহফিল আয়োজকদের কাছ থেকে কোনরূপ হাদিয়া গ্রহণ করতেন না। এমনকি যাতায়াত খরচও না। সম্পূর্ণ নিজ খরচে ওয়াজ মাহফিলে যাতায়াত করতেন, আর নিজের ক্ষেত-খামারে নিজেই কৃষিকাজ করতঃ এর আয় দিয়েই সংসার চালাতেন।
তিনি হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ.-এর শিষ্য, তরফ পরগণাস্ত রায়ধর গ্রামের সুপ্রসিদ্ধ সংগ্রামী আলিম হযরত মাওলানা আসাদুল্লাহ রহ.-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করতঃ সমাজ সংস্কার ও স্বাধীনতা আন্দোলনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখেন। তিনি স্বীয় উস্তাদের নেতৃত্বে স্থানীয় অত্যাচারী জমিদারের বিরুদ্ধে বহু লড়াই করেছেন। সকল প্রকার বাতিলের বিরুদ্ধে হক্বের সংগ্রামে তিনি ছিলেন সদা আপোষহীন, লৌহকঠিন এবং পর্বতসম অনড়।
এ সংগ্রামী পুরুষের ঔরষেই জন্মগ্রহণ করেন তাঁর স্মৃতির ধারক ও বাহক মাওলানা ওলীপুরী। তিনি ৫ সহোদর এবং ২ সহোদরার মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। মাওলানা ওলীপুরী যখন পাঁচ বছরের শিশু, তখনই মাতা-পিতাকে হারিয়ে এতীম হয়ে পড়েন। যদ্বরুন শিশুকাল থেকেই তাঁকে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয়।
শিক্ষা-দীক্ষা ঃ
বড় বোন গুলেনূর রহ.-এর নিকট তাঁর লেখাপড়ার হাতেখড়ি। তাঁর নিকট থেকেই আরবী ও বাংলা বর্ণের পরিচিতি লাভ করেন। এর কিছুদিন পরই বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর পিতা-মাতা, বড় ভাই মাওলানা আব্দুস সামাদ ও বড় বোন গুলেনূর ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ……রাজিউন।
মাত্র দু’সপ্তাহের ব্যবধানে পরিবারের প্রধান চারজনের ইন্তেকালে একটা পরিবারকে কী পরিমাণ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয় তা বলাই বাহুল্য।
তাই মাওলানা ওলিপুরীর জীবনেও নেমে আসে এক দারুণ বিপর্যয়। এমতাবস্থায়ই প্রথম দু’বছর আপন মাতুলালয়ে থেকে শরীফাবাদ প্রাইমারী স্কুলে লেখাপড়া করেন। অতঃপর কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে অবস্থিত প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইমদাদিয়ায় ভর্তি হয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ছাত্র জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। জামিয়া ইমদাদিয়ায় অধ্যয়নকালে শতাধিক সহপাঠীর মধ্যে প্রায়ই তিনি প্রথম স্থান অধিকার করতেন।
অতঃপর মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণের জন্য হবিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া ছা’দিয়া রায়ধর মাদরাসায় ভর্তি হন। এখানে অধ্যয়নকালেই স্বীয় পিতার প্রাণপ্রিয় শিক্ষাগুরু হযরত মাওলানা আসাদুল্লাহ রহ.-এর সুযোগ্য উত্তরসূরী, ইসলামী সংগ্রামের অগ্রনায়ক মুজাহিদে মিল্লাত হযরত মাওলানা মুখলিসুর রহমান রহ.-এর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হন এবং হক্ব প্রতিষ্ঠায় বাতিল বিরোধী সংগ্রামের বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
জামেয়া ছা’দিয়া রায়ধর মাদরাসায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করতঃ মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে ঢাকার বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান জামেয়া কুরআনিয়া লালবাগে ভর্তি হন। সেখানে ১৯৭৫ খৃস্টাব্দে দাওরায়ে হাদীস (তাকমীল ফিল হাদীস) সমাপ্ত করেন। অতঃপর ভারত উপমহাদেশের শীর্ষস্থানীয় তাফসীর বিশারদ হযরত মাওলানা আহমদ আলী লাহুরী রহ.-এর সুযোগ্য শিষ্য হযরত মাওলানা শামসুদ্দীন কাসেমী রহ.-এর নিকট জামেয়া হুসাইনিয়া আরযাবাদ, মীরপুর, ঢাকায় ১৯৭৭ খৃস্টাব্দে তাফসীর বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
কর্ম জীবন ঃ
তাঁর কর্মজীবনের সূচনা অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখা-পড়া শেষ করে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলাধীন শাহপুর হুসাইনিয়া মাদরাসায় কয়েক বছর হাদীস-তাফসীর সহ বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। অতঃপর একাধারে আট বছর পর্যন্ত স্বীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া ছা’দিয়া রায়ধর, হবিগঞ্জ-এ অত্যন্ত সুনামের সাথে শিক্ষকতা করেন।
এরপর এক যুগেরও অধিক কাল পর্যন্ত হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলাধীন ‘দারুস সুন্নাহ মাদরাসা মনতলা’-এর প্রধান পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।২০০০ খৃস্টাব্দে শায়েস্থাগঞ্জে মাদরাসায়ে নূরে মদীনা প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে অদ্যাবধি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
দাওয়াত ও তাবলীগ ঃ
তিনি একজন শিক্ষানুরাগী। শিক্ষকতার সাথে সাথে কর্ম জীবনের শুরু থেকেই ইসলামের দাওয়াত মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে দরদী হৃদয়ে পথহারা মানবতাকে সঠিক পথের দিশা দিয়ে যাচ্ছেন জীবনভর।
তিনি বাংলাদেশ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ বিশেষ ইসলামী সম্মেলন সমূহে অগণিত জ্ঞান পিপাসু শ্র“তার তৃষ্ণার্ত হৃদয়ে পবিত্র কুরআনের জ্ঞান সাগর থেকে পানি সিঞ্চন করে পরিতৃপ্ত করে থাকেন। তাঁর যাদুকরী উপস্থাপনা, হৃদয়গ্রাহী, যুক্তিপূর্ণ, তাত্ত্বিক ও দলিলভিত্তিক আলোচনায় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় বাতিলের প্রাসাদসমূহ। সুপ্রতিষ্ঠিত হয় হক্ব ও হক্বানিয়ত তথা সত্য ও সঠিক মতবাদ।
তাইতো কুতবে আলম শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ মদনী রহ.-এর সুযোগ্য ছাত্র হযরত মাওলানা নূর উদ্দীন গহরপুরী রহ.-এর ভাষায় “মাওলানা ওলীপুরী আহলে সুন্নত ওয়াল জামা’তের ভাষ্যকার।” কুতবে আলমের আরেক ছাত্র কুমিল্লা ক্বাসিমুল উলূম মাদরাসার শায়খুল হাদীস মাওলানা আশরাফ আলী দা. বা.-এর ভাষায় “মাওলানা ওলীপুরী খতীবে আ’যম” উপাধীতে ভূষিত হয়েছেন।
বাহাস-মুনাযারা ঃ
হক প্রতিষ্ঠা ও বাতিল খণ্ডনের লক্ষ্যে মাওলানা ওলীপুরীকে জীবনে বহুবার বিভিন্নভাবে বাতিলপন্থীদের মুকাবেলা করতে হয়েছে। তন্মধ্যে বাহাস-মুনাযারা তথা বিতর্কানুষ্ঠানের বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। আল্লাহ পাকের অশেষ শোকর যে, তিনি প্রতিটি বিতর্কানুষ্ঠানে হক্বের ঝাণ্ডা সমুন্নত রেখেছেন। পরাভূত করেছেন বাতিল ও বাতিল পন্থীদের। যার আংশিক আলোচনা আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাত পরিচিতি এর ২৯৪নং পৃষ্ঠায় করা হয়েছে।
ওলীপুরী সাহেবের উস্তাদগণ
* যে সকল উস্তাদগণ থেকে ওলীপুরী সাহেব হুজুর হাদীস শিক্ষা লাভ করেছেন
ক্রমিক নং
কিতাব
আসাতিযায়ে কেরাম
১।
সহীহুল বুখারী
আল্লামা আহমদ শফী (দা.বা.)শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক রহ.আল্লামা মুফতী আব্দুল মুইয রহ.
২।
সহীহ মুসলিম শরীফ
আল্লামা আব্দুল মজিদ (ঢাকুবী হুজুর) রহ.
৩।
জামেয়ে তিরমীযী শরীফ
আল্লামা হেদায়েতুল্লাহ রহ.আল্লামা মুফতী আব্দুল মুইয রহ.
৪।
সুনানে আবু দাউদ শরীফ
আল্লামা হারুন (চাটগামী হুজুর) রহ.
৫।
সুনানে নাসাঈ শরীফ
আল্লামা মুহাম্মদুল্লাহ হাফিজ্জী হুজুর রহ.
৬।
তাহাবী শরীফ
আল্লামা মুহাম্মদুল্লাহ হাফিজ্জী হুজুর রহ.
৭।
ইবনে মাজাহ শরীফ
আল্লামা মুহাম্মদুল্লাহ হাফিজ্জী হুজুর রহ.
৮।
মুয়াত্তা মালিক
আল্লামা মুহাম্মদুল্লাহ হাফিজ্জী হুজুর রহ.
৯।
মুয়াত্তা মুহাম্মাদ
আল্লামা মুহাম্মদুল্লাহ হাফিজ্জী হুজুর রহ.
১০।
যার কাছ থেকে ওলীপুরী সাহেব হুজুর তাফসীর শিক্ষা লাভ করেছেনআল্লামা সামসুদ্দীন কাসেমী রহ. প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক: জামিয়া হুসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ ঢাকা।
১১।
যার কাছ থেকে ওলীপুরী সাহেব হুজুর ইলমে ক্বেরাতের সনদ লাভ করেছেনহযরত কারী আজিজুর রহমান সাহেব (দা.বা.) সিকন্দরপুরী, হবিগঞ্জ।
১২।
যে সমস্ত মাশায়েখগণ ওলীপুরী সাহেব হুজুরকে তরীকতের সনদ প্রদান করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতমআল্লামা আহমদ শফী (দা.বা.) মহাপরিচালক: মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী চট্টগ্রাম।
Deprecated: Colon prefixed route placeholders like `:foo` are deprecated. Use braced placeholders like `{foo}` instead.
/var/www/sites/kitabghor.com/vendor/cakephp/cakephp/src/Routing/Route/Route.php, line: 303
You can disable all deprecation warnings by setting `Error.errorLevel` to `E_ALL & ~E_USER_DEPRECATED`. Adding `vendor/cakephp/cakephp/src/Routing/Route/Route.php` to `Error.ignoredDeprecationPaths` in your `config/app.php` config will mute deprecations from that file only. in /var/www/sites/kitabghor.com/vendor/cakephp/cakephp/src/Core/functions.php on line 318